বিশেষ প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারে গেলে ভুক্তভোগী একাধিক নারী পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন শ্যামল রাজগঞ্জে যোগদানের পর থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে নামজারি, দাখিলা, মামলার তদন্তসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে অনৈতিকভাবে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন।
রাজগঞ্জ ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মাসুদ আলম বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি মামলায় আমাকে বিবাদী করা হয়। ওই মামলা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে আদালতের পক্ষ থেকে রাজগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন শ্যামলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মামলা তদন্ত কাজ চলমান সময়ে শাখাওয়াত হোসেন নিরপেক্ষ রিপোর্ট প্রদান করবেন মর্মে আমার কাছে নগদ টাকা দাবি করলে আমি তাকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করি। পরবর্তীতে তিনি প্রতিবেদন দাখিলে বিলম্ব করতে থাকলে পুনরায় তাকে আরো ৫ হাজার টাকা প্রদান করি। বিরোধকৃত জায়গায় আমি পাকা দালান নির্মাণ করে বসবাস করলেও ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা একতরফা প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত ২৩ অক্টোবর রাজগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী মো. মাসুদ আলম।
মামলার দতন্ত রিপোর্ট প্রদানের নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ একই তারিখে শাখাওয়াত হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন জামাল উদ্দিন নামের আরেক ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী ইকবাল মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নের দিলীলপুর মৌজায় তার বাবার মালিকীয় সম্পত্তি ওয়ারিশ হিসেবে নামজারি জমা খারিজ খতিয়ানের জন্য তিনি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শাখাওয়াতের দ্বারস্থ হন। একপর্যায়ে ইকবালের নামজারি জমা খারিজ খতিয়ানের আবেদনটি খারিজ করে তার অন্য ভাইয়ের নামে জমা খারিজ খতিয়ানটি প্রদান করেন শাখাওয়াত হোসেন। এতে ইকবাল ও তার বোনদের নি:স্বত্ববান দেখানো হয়।
ইকবাল বলেন, ওই জমা খারিজ খতিয়ানে উপজেলা ভূমি সহকারী কার্যালয়ের বালাম সংশোধন করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কার্যালয়ের বালাম সংশোধন করা হয়নি।
রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলাদিনগর গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার কন্যা শাহেদা আক্তার জানান, আমার জায়গার সামনের অংশে সরকারি জায়গা যুক্ত রয়েছে মর্মে আমাকে ভয় দেখিয়ে আামার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন ভূমি কর্মকর্তা শ্যামল। পরে তাকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করলেও তিনি আমার খতিয়ান সংশোধন না করে আমাকে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরাচ্ছেন।
রাজগঞ্জ বাজারের হাওয়ার্ড ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন নুরুর কাছ থেকেও পিটিশন মামলার রিপোর্ট প্রদানের নামে ২০ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে তার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নুরুর বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ ওঠে।
রাজগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন শ্যামল তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কিছু ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এসব মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানির চেষ্টা করছে। তারা চায়য়, আমি এখানে থাকতে হলে তাদের কথা মতো অনিয়ম করে তাদেরকে সুবিধা প্রদান করে থাকতে হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়কে দেওয়া অভিযোগ কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে আমার কাছে শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করা হবে।